Friday, May 23, 2008
বাউল
সর্বদা মন নেচেই আছে, কিছুই তো হারায়নি
মাঝে মাঝে এদিক ওদিক
বনপাহাড়ি চাঁদের নদীর
ঢেউ কুড়িয়ে দিন কেটেছে, পিছনে তাকায়নি
শেষে যখন মনে হল কিচ্ছুটি বাদ যায়নি
ইচ্ছেমতো পাওনাতে কেউ গোলমাল বাধায়নি
ভেঙে গেল ভুলের বোঝা
সব পাওয়া কি এতই সোজা
রূপ-শালিকে ধান খেয়েছে, অরূপরতন পায়নি
Tuesday, May 20, 2008
বিরাজমোহিনী
তোমার ওখানে বৃষ্টি তুমুল
কাপড় শুকানো ভারি হল দায়
বড়ি ও আচার তথৈবচ
সিঁড়ি ভাঙতেই হাঁপ ধরে যায়
তবু যেন আছো শান্তির কাছে
যেখানে সবুজ প্রাণের আরাম
মায়াকলমের চিত্রবন্ধে , অধরামাধুরী
ঠিক ধরা আছে প্রতিটি ছত্রে
লেবু কামিনীর পত্রে পত্রে জলজ সুরভি
ছল খুঁজে নিয়ে বিরাজমোহিনী
বাতাসে ভাসালে - কল্যাণীয়াসু
তোমাকে বলছি , কাউকে বলিনি
তুমি সদা হৃদে বিরাজ মোহিনী
সত্যমঙ্গলও রোদের দহনে
স্বপ্নে ভিজছে বৃষ্টির গানে
সকল বেলাই কাটিয়া গেল যে
বিকেল বেলার প্রবাসজীবনে
ঘরের ভিতর কালবোশেখি
সেই সুযোগে দমকা হাওয়া কালবোশেখির
অনধিকার থিরবিজুরির গৃহপ্রবেশ ,
ওলোটপালোট ধুলোর স্নানে চুলের স্তবক
হার মানা হার দিতেই হল তোমার গলে
মরা নদীর স্রোত বয়ে যায় উঠোন জুড়ে
উদ্দামতা থামলে পড়ে সোঁদা বাতাস
হারিয়ে যাওয়া জলছবিদের কুড়িয়ে ফেরে
একটা দুটো সন্ধ্যাতারা দেওয়াল খোঁজে
ফুটবে কোথায় ? আকাশ তখন শান্তি হয়ে
বাড়িয়ে দুহাত সুদূরপ্রসার আমার ঘরে
ছোয়াঁছুঁয়ি খেলতে চাওয়া মেঘগুলোকে
( বিস্মিত হই ) , তবু কেমন ধরতে পারি
বাদলসুরে দেবব্রতের দূরাগত স্বর্ণধারায়
যেমন করে গাইছে আকাশ সঙ্গে তারি
বেসুর মেলাই । রাংচিতে আর কলমিলতার
বেড়ায় তখন পারিজাতের অমল সুবাস
শকুন্তলা
লাট্টু-ঘোরা ছেলেমানুষ দিন
হাত বাড়ালেই নাগাল পেতে পারি ....
ভাবতে ভাবতে এমনধারার কথা - হাজার বছর পেরিয়ে
গেছে কবে - কোন কালে যে জন্মেছিলাম আমি ,
বর্ষা ছিল , নাকি ফাগুন হাওয়া - প্রাগৈতিহাস হলদেটে সব দিন
তুচ্ছ এখন , ভীষণ অদরকারী ।
বিগত দিন- জমানো অস্তিভার ; অবিশ্বাসের , কিছু বা প্রতীক্ষার
এক ফুঁয়ে সব উড়িয়ে দিও তুমি
অনেক দূরের - দূর আকাশের গায়
বশিষ্ট আর অত্রি অঙ্গিরাকে স্পর্শ ক'রে উত্তরাকাশ আরো
সরলরেখায় ধ্রুব আছেন স্থির ,
সেইখানে তো অনন্ত ব্ল্যাকবোর্ড - পারলে তোমার ভালবাসার কথা ,
দু- চার কলম খোদাই ক'রে দিও , কফির কাপে বিমর্ষ সন্ধ্যায় ।
ঢেউ নেমেছে দু'গাল গড়িয়ে , হয়তো সেসব স্বপ্ন ভাঙা ঢেউ -
মিথ্যে স্বর্গ গড়তে চাওয়ার ,
গলিতসুখ অন্তমিলন পয়ার-টয়ার হবে
রোদ উঠেছে তোমার উপবনে ? এখানে আজ নিরাবয়ব দিন ,
দুপুর - বিকেল বৃষ্টি ধুয়ে গেছে , - পিতৃগৃহে শকুন্তলার শাড়ি
ভিজছে তুমুল প্রবল বরিষণে ,
অন্যমনা মগ্ন আছেন , ভুলতে চেয়ে ব্যস্ত আছেন ,
কালিদাসের নতুন লেখায় , কুমারসম্ভবে ।
Thursday, May 1, 2008
ধারাবিবরণী-১
ছেলেবেলা থেকেই ভাবসম্প্রসারণ করে আসছি 'চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন'...অর্থাত্ চিরসুখী মানুষেরা কখনোই ভ্রমণ করেন না...অথচ আমার ঘরকুনো স্বভাব নিয়ে সকলের মাথা ব্যথা। ক্যান্ রে বাবা? লোকের সুখ দেখতে পারিস না, না? কই , আমার মাথায় যখন 'চেতনাপ্রবাহ' না ওই ধরনের কি একটা থান ইঁট শব্দ এসে পড়েছিল, তোরা তো কেউ ফিরেও তাকাসনি। মুচ্ছো যাইনি ঠিকই, কিন্তু ঠোকাঠুকি লেগে সামনের দুটো দাঁত ভেঙে যে পেটে চলে গেল, সে বেলা? কী বলছিস বিড়বিড় করে? আমার দিকে তাকালেই মুচ্ছো যাবার সম্ভাবনা? তা সে কথা খুব ভুল বলিসনি...আমি নিজেই আয়নায় দেখে কয়েকবার ভিরমি খাবার পরে আয়নাটাকে জলের দরে বেচে দিলাম...যাকগে, ভোগ্যবস্তু যত কমে, ততই মঙ্গল...এই দ্যাখো, ভোগ্য শুনেই মনে পড়ল ভোগ...একবার বেনারসে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে অপূর্ব এক খিচুড়ি খেয়েছিলাম...তাতে সব প্রসাদ মেশানো...নারকেল নাড়ু, পায়েস সমস্ত...'তবু ভরিল না চিত্ত ঘুরিয়া ঘুরিয়া কত তীর্থ হেরিলাম'...ওইরকম প্রসাদ আর পেলাম না, তবু পড়িল না পিত্ত...তা আপনারা কিছু মনে করবেন না, আমি খাই একটু বেশি...বেশি খেতে গিয়ে একবার যা বিপত্তি হয়েছিল না! দমটম আটকে এক্কেবারে অজ্ঞান...ধরাধরি করে (সে বড় সোজা কথা নয়) তো হাসপাতালে নিয়ে গেল...ওষুধ খাবার জায়গা পেটে ছিল কিনা মনে নেই। যেটা মনে আছে, তা হল ডাকতারবাবুর বাংলাভাষার প্রতি ভালবাসা। উনি-ই প্রথম ও শেষ ডাকতার যাঁকে আমি বাংলায় ডিসচার্জ সার্টিফিকেট লিখতে দেখেছি। 'যা ফিরি অজ্ঞান তুই যা রে ফিরে ঘরে' লিখেছিলেন আমাকে। বড় ভাল ছিল গো মানুষটা...
ধারাবিবরণী-২
যে কথা হচ্ছিল --- ভাল মানুষ কি আর নেই পৃথিবীতে? আছে, অনেক আছে... সেদিন যে কুট্টিমানি, মানে আমার ছোটোমাসি ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ঘাম মুছবার জন্য রুমালটা বার করতে গেল, আর সেই সুযোগে একটা খাম টুপ করে নিচে পড়ল, সেটা ভালমানুষ না হলে হত? আমি পায়ের আলতো কাজে খামটাকে সোফার তলে (বিশ্বকাপ ফুটবলের কী মহিমা!!)...তারপর মানি চলে যেতে খাম খুলে দেখি, ক্লাসিকাল ডান্সের অনুষ্ঠান, তারই একখানা কার্ড। সেটা তো আর নষ্ট হতে দেওয়া যায়না, তাই বয়ান অনুযায়ী নির্ধারিত দিনে, নির্ধারিত হলে যেতেই হল। ভাবলাম মানির সাথে যদি দুর্ভাগ্যবশত দেখা হয়েই যায়, তাহলে বলব, কার্ডটা ফেরত দিতে এসেছি...আর দেখা যদি না হয়, তবে তো সোনায় সোহাগা। দেখা হলনা, জানেন...হি হি...আর দারুণ হল অনুষ্ঠান...
মনে মনে ভাল মানুষদের সেলাম জানালাম...থাঙ্কু মানি কুট্টি...
কিন্তু ওই যে, এই দ্যাবাপৃথিবীতে অবিমিশ্র সুখ আপনি পাবেন না...মনে করুন, খুব সুস্বাদু একটি পদ বেশ তারিয়ে তারিয়ে খাচ্ছেন, আমোদে চোখ প্রায় বুজে এসেছে, এমন সময় মুখে পড়বে একটা বিচ্ছু লঙ্কা...দেবে সব বিগড়ে...
ছোটোমাসির ছেলেটিও তেমনি...বয়স সবে পাঁচ পেরিয়ে ছয়, এরই মাঝে মুখে মুখে কথা কয়...করেছে কী, একটা দড়ি নিয়েছে, তার পেছনে আর একটা দড়ি বেঁধেছে, তার পেছনে খানিক সুতলি, কিছুটা ইলেক্ট্রিকের তার, দুটো পুরনো সাদা রিবন...এই ভাবে বাঁধতে বাঁধতে পঞ্চাশ হাত লম্বা একটা রেলগাড়ি...সে গাড়ি সদা চলমান...একতলায় বসার ঘর হয়ে ডাইনিং, বারান্দা, সিঁড়ি, দোতলাতেও এঘর সেঘর ঘুরছে...যে কোনো মুহূর্তে যে কেউ হোঁচট খেতে পারে...আমিও খেলাম...মাথাটা ঠুকে গেল দেওয়ালে...চোখে সর্ষে ফুল...
কান ধরে দুটো জিলিপির প্যাঁচ দেওয়ার তাগিদে গাড়ির মালিককে খুঁজে বার করলাম...কি ব্যাপার এটা?
ট্রেন, দেখতেই তো পাচ্ছ...
ট্রেন বার করছি তোর...এক্ষুণি পড়ছিলাম না হোঁচট খেয়ে?
তা পড়তেই পার...accident হয়না? ট্রেনে কাটা পড়েনা মানুষ?
অ...
আপনারা একটু অপেক্ষা করুন কেমন...বেলতলায় কে যেন এসেছে...বেল বাজাচ্ছে...দরজাটা খুলে দিয়ে আসি...সেই সাথে মিষ্টিগুলোরও সদ্গতি...
ধারাবিবরণী-৩
বলুন তো বেলতলায় কে বেল বাজাচ্ছিলো? আরে না মশাই, ন্যাড়া নয়...তবে প্রায় সেই রকমই এক ভদ্রলোক...বিরলকেশ...যাকে বাংলায় বলে টেকো আর ইংরিজিতে বল্ডউইন...সেই মিস্টার বল্ডউইন এসেছেন আমার উকিল ছোটোমেসো মিস্টার চেম্বারলিনের কাছে( যিনি নিজের চেম্বারে সর্বদাই লীন থাকেন)...যাকগে, আইনি কচকচিতে আমাদের কী দরকার বলুন...
এর চেয়ে মিষ্টির মিস্টিক গল্প অনেক মনোরম...মিষ্টি বললেই মনটা কেমন রাবড়ির জন্য উচাটন হয় না? তৃষিত বক্ষ (নাকি জিহ্বা?) বলে রাখি বেঁধে...সত্যি এমন সেকুলার, গণতান্ত্রিক খাবার, ...রাম আর বাবরির এইরকম শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আর কোত্থাও মিলবে ভূভারতে?
বাবরির কথায় সেই দুঃসাহসী ছেলেটিকে মনে পড়ল...ওর কথা বলেছি কি আপনাদের? ক্লাস ফাইভের হাফইয়ারলি পরীক্ষায়(আমি এই সেদিনও জানতাম যে কথাটা হ্যাপি-আর্লি, আমার এক ছাত্র কিছুদিন হল সংশোধন করে দিয়েছে)...যাই হোক যা বলছিলাম... সেই ছাত্রটি হাফইয়ারলি পরীক্ষায় বাবরের বাবার নাম লিখেছিল বাচ্চু মিঞা, ব্র্যাকেটে ডাকনাম...বিপুলা এ পৃথিবীর কোন্ প্রান্তে বসে যে কোন্ গবেষক এই তথ্য আবিষ্কার করেছেন বা করেননি, তা কে বলতে পারে!!
কি মুশকিল! ঢিল ছুঁড়ছেন কেন? ধারাবিবরণীর শেষে 'আগামী সংখ্যায় সমাপ্য' এই শব্দগুচ্ছ দেখতে পাচ্ছেন না বলে? স্থিতধী পাঠককুল, এইটিই শেষ সংখ্যা...যাচ্ছি রে বাবা যাচ্ছি... আমি কি জানিনা যে আপনাদের সময়ের দাম গলদা চিংড়ির চেয়েও বেশি?
এই দ্যাখো, ঘুরে ফিরে সেই মাছের কথায়...আসলে আমি যে মীন মাইন্ডেড, আই মিন, মীন মানে মাছ একটু বেশিই...
আরে, আবার ঢিল কেন? 'সময় যদি ফুরিয়ে থাকে হেসে বিদায় করো তাকে'... সত্যি রবীন্দ্রনাথকে এত তুরুশ্চু করেন আপনারা...
রিপোর্টাজ, শেষ পাতা
নিহিতার্থ যেইদিন বুঝে নেবে দূরত্ব ঘনালো,
তার ঠিক একদিন আগে, জানাবো তোমাকে...
আজন্ম রোদগাথা, মণিমালা মেঘ
বুকে বেঁধা কাচ-কণা কিছু -- রক্তবিন্দু তারারাজি,
বিষাদপ্রতিমা, তোর কত ভুলচুক ---জানা বা অজানা
স্মৃতির শিলাস্তূপ দুহাতে সরিয়ে কত দূরে আর?
কত দূরে যাওয়া যায়?
একা একা ভুল গলি ভুল বাঁক নিয়ে
দক্ষিণী কর্ণাটে কিংবা মালবরাজ্যে তুই চলে যাস যদি?
মঞ্জুলা, চুলে ফুল দিবি, ঘাঘরাতে বেনারসী আলো...
অমল কমল খুঁজে মন যদি উদাসীন হয়,
'ফিরে এসে কড়া নেড়ে দেখি' এমনটা সাধ হয় যদি,
বন্ধ টিকিটঘর, খাঁ খাঁ রেলপথ,
ঝরে গেছে সব পাতা, পিপুল অশথ বট,
ছায়াহীন কোথায় দাঁড়াবি?
এত কি সহজ মেয়ে? এত সুমধুর?
কঠিনও যে কী করে তা বলি?
তির্যক চাহনি শুধু, ছুঁড়ে দেওয়া দু-চারটে বাণী
সঞ্চারী থেকে এসে বিনা বাক্যব্যয়ে
সহজিয়া তানকারি নখাগ্রে ছুঁয়ে দেয় শেষের আভোগ।
ততদিন ধুলো ঘাঁটাঘাঁটি, অবেলায় স্নান-খাওয়া
আরো যা যা মন চায় করো...
ঝুলন সাজাও ফুলবনে, চাঁদমালা গেঁথে পরো
সিঁথিমূলে, বাজুতে, গলায়...
বোকা মেয়ে, সবাই কুমার নয় --
বাঁচাবে যে তোকে দূরদ্বীপে অজানিত ভেসে যাওয়া থেকে...
সবাই প্রণব নয় -- পথভোলা পাগলিকে আশ্রয় দেবে...
শেষপাতা ওড়াবার আগে দেখে নিও আরো একবার
পিছুটান কতটা মায়াবী, জরুরী কতটা--
শেষ হল আরব্য রজনী,
বাঁধাপথে দিন গোনা শুরু হোক তবে...
দ্বিপ্রহরে সেতুহীন নদী, মাঝরাতে বিধ্বংসী ঝড়
যেদিন আসবে একসাথে,
তার ঠিক একদিন আগে, জানাবো তোমাকে
Tuesday, April 1, 2008
অরূপ দিও
আরো কিসব মেমসাহেবী
রঙিন ফুলের নাম বলেছ
মনে মনে আঁতকে উঠে ইষ্টদেবের নাম নিয়েছি
ওসব আমি সাতজন্মেও দেখিনি তো
হ্যাঁগো ওসব বানিয়ে তোলা ফিতে-কুসুম
নয়তো আবার ?
দু চারখানা লঙ্কাজবা , কুন্দ-বকুল ,
এই তো আমার সাধ্য জানি -
বিলেত ফেরত তোমার ফুলের তো অনেক ,
ভয় পেয়েছি ।
এই বাগানে রূপ বেশী নেই , গন্ধ কেবল ।
কিং সলোমন , কোথায় তুমি
মূল্যায়নের মাপকাঠিটা হারাওনি তো ?
অবসাদের দিনগুলোতে ভরসা দিও
রূপকে কিছু অরূপ দিও , গন্ধ নিও ।
আমাদের সেই তাহার নামটি
নদীটিও বাঁক নিয়েছে নতুন দিকে
কবিতা তো আজ গুঁড়ো গুঁড়ো কল্পনা
পাগলি মেয়েটা , তুইও আজ কত দূর
তোমার ছাদে তো দখিন হাওয়ারা আজও
ছুটোছুটি করে , ছুঁয়ে দিয়ে যায় চুল
এখানে কদম মোটেই ফোটে না জানো
বর্ষায় শুধু ঘোলা জল , পাঁক কাদা ।
তোমার সাথে তো চুক্তি ছিলনা কোনো
তবুও যখন অকারণে মনে পড়ো ,
তুর্কি তরুণ জোড়ে ও ঝালায় বাজে
রাতে আকাশে শুধু সুর আনাগোনা
ওখানে কি কোনো জনপদ-টদ আছে?
অপেক্ষা শেষ , আমারো সময় হল ,
অঞ্জনা নেই , বৈতরণী তো আছে
দর্শনটুকু দিও কোজাগরী আলো ।
স্বগত
বিদ্যুৎবাহী তারে
দুটো মৃতদেহ নিজেদের ঢেকে নিলো
পশম অন্ধকারে
যুবকটি ঋজু , সরল গাছের মতো
শ্রমিক অভ্রখনির
মেয়েটি জাতিতে হাসি খুশি হিন্দোলা
অটুট আকাশমণি
কাল ভোরে হবে গুঞ্জনবেলা শুরু
আশপাশ অঞ্চলে
কথাহীন ওরা জড়াজড়ি পড়ে থাকে
অখন্ডমন্ডলে
আবার একলা রাত
মধ্যরাতের ঝড়ের ধুলো
যখন আমার শয্যা ছুঁলো
তোর মুকুটে অন্য পালক কী রং মেখেছিস !!
বিভ্রমে না মতিভ্রমে অবাক থেকেছি
ফিরতে কি আর পারব সমে
রোজ বিকেলে সন্ধ্যাগমে
নিরক্ষীয় অঞ্চলে তাই বৃষ্টি এঁকেছি
আসার আগে সাদা গোলাপ সাজিয়ে রেখেছি ।
Tuesday, March 25, 2008
যোধা আকবর সংবাদ
থাকেন আরাম-বাগিচায়
তাঁর কাছে যেই খাস বেয়ারা
হেঁসেল ঘরের চাবি চায়
বলেন রানি ভীষণ কোপে
'চাইছি পরিবর্তনে
খেতেই হবে মোগল খানা
এমন কোনো শর্ত নেই'
তারপরে তো চাঁদ উঠেছে
আবির মাখা ফাগ রাতে,
চমকে চেয়ে দেখেন রাজা
তুর্কি নাচন ঘাগরাতে
'সৈন্যরা সব মুরগি পোষে'
বলেন যোধা, আকবরে--
'ফ্লু হয়ে কি মরব শেষে
ক্যামনে হেথায় থাকব রে?'
রানির জিভের খবরখানা
রাজার বেশি রাখবে কে? (দুষ্ট পাঠক, অন্য অর্থ করবেন না)
রোজই পাতে মুরগি-ভাতে--
থাকেন রানি ঘাড় বেঁকে।
কাজেই তখন নিদান দিলেন
হুমায়ুনের বংশধর,
'মুরগি নিয়ে আর্গু বৃথা
তার চে' বরং হংস ধর'
কাছেই ছিলেন বৈরাম খাঁ
বলেন তিনি সস্নেহে,
'ঠাণ্ডা মাথায় ভাব যোধা মা,
এত্ত অধীর হোস নে হে...
ব্যারাম হলে ওষুধ আছে
টোটকা কিছু শিখে নে
আরামবাগের রানিমা গো
ভয় পেয়ো না চিকেনে...'
Friday, March 7, 2008
প্রত্নতত্ত্ব
লতাপাতা জটাজাল গোপন কুটির
তেজীয়ান চাষীনেতা, দূতিয়ালি নানা মাধ্যমে,
কাল রাতে ছাই হবে কোন নীলকুঠি...
মনের ওপর এত উর্বর পলি,
যেন সে অগ্নিদিন কালকেরই কথা।
যুগান্ত কেটে যায়--
সোনালী ধানের ক্ষেতে দুধ জমে ঋতুতে ঋতুতে।
আজও বুঝি রানাঘাটে সেই ছবি স্থির হয়ে আছে
কাদামাখা নদীপাড়, বুড়ো মাঝি,
মাছের চুবড়ি নিয়ে জেলে ও জেলেনী, পাটের আড়তদার
সাইকেল আরোহী, ভিড়ের গাদায় আরো কত লোক কত কিসিমের।
একতারা বেজে ওঠে
ভবনদী পার করে দাও গো পাটনী...
ওইপারে তাঁত চলে খটাখট, জরিপাড় ফুলকাটা শাড়ি
চুড়ি বেলোয়ারি, বিচিত্র মলম সব শোভিতেছে শোকেসে শোকেসে।
দেওয়ালে কোয়েল মল্লিক ঝুলে আছে প্রেমিকের সনে।
হঠাত খবর পাই মনে
এই আমি আর সেই হরিদাস পাল, উভয়ের কোনো ভেদ নাই।
উভয়েরই ছেঁড়া ছাতা, উভয়েই কল্পনাবিলাসী।
সব মিথ্যে সব ইতিহাস
ইতিহাস ধুয়ে গেছে চূর্ণীর জলে...
নীল খাম
একবার পূর্ণ হয়ে দেখা দাও,
কাছে এসো দুটো চারটে যা হোক,
কথা বলো জানো তো সবই...
কাজে নিষ্পেষিত হতে হতে ভাবি
কাল ঠিক খোলা যাবে তোমার চিঠির খাম
কাল ঠিক জেনে নেবো নির্দেশাবলী
অবশ্যপালনীয় আর কী কী আছে।
পুজোর পলাশফুল কোন বই-এ রাখা আছে
খুঁজে দিতে হবে?
ভয় হয় জানো...
তোমার অক্ষর তো, অভিমানী তোমার মতোই--
খুলে যদি দেখি-- ওরাও করেছে আড়ি,
সাদা পাতা ফেলে রেখে
তোমার কাছেই যদি ফিরে গিয়ে থাকে...
চরৈবেতি
কত দূর পাড়ি দিয়ে, কত দূরের গন্ধ সাথে নিয়ে --
পিয়ানো শিখছো,
নোটেশন না দেখেই বাজাতে পারো
যখন গাছেরা ঘুমোয়-এর নির্ভুল সুর....
ভারি ভাল লাগল,
চুপ করে বসে রইলাম অনেকক্ষণ...
ফিসফিস করে জানতে ইচ্ছে হল
যখন গাছেরা ঘুমোয়, তখন কী ভাবো...
তোমার সেই অন্তমিল দিয়ে কথা বলবার অভ্যেস....
ওভাবেই বলো এখনো?
আসলে হয়েছে কি, কাল পুরনো বইপত্তর
ঘাঁটতে গিয়ে দেখি তোমার একটি চিরকুট।
অমনি গলার কাছে দপদপ, শিরা টানটান।
বুঝলাম রক্ত বইছে দ্রুত--
দুভাঁজ করা ছোট্ট কাগজ,
তোমার ভালবাসার কথকতা,
সেই কপালে হাত চাপড়ে হায় ভগবান বলা,
তোমার নিমগ্ন মুখ
সব এক নিমেষে ভিড় করে এল...
বিশ্বাস করো, ওই এক নিমেষই,
এর বেশি ভাবা সংবিধানে নেই।
শুধু স্থলপদ্ম ফুটে আছে, এমনটা বোধ হলে
নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে তোমার গন্ধ পাই...
সন্ধ্যা-ছবি
তার ধার ঘেঁষে সার সার মৌমাছির বাক্স,
সারাদিন ফুলে ফুলে উড়ে ক্লান্ত ওরা ফিরছে
অন্যের বানিয়ে তোলা বাসাতে
আদিবাসী হস্টেলের বিকেল জানলায় মুখ রেখে
দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা,
ভাবছে তীর ধনুক, নদী, মায়ের মুখ
বেগুনক্ষেতে লুকনো তার ছেলেবেলা
সন্ধ্যা টাঙনের নড়বড়ে ব্রিজ পেরিয়ে
ভটভটি ভ্যানে চেপে বসল দুটি ঘোমটা পরা বউ।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দ্রুত চলেছে যার যার শ্বশুর ঘরে।
হাতে ওষুধের পুঁটুলি মুঠো করে ধরা।
পাটপচা জল শুকোয়নি এখনো, কোথাও কোথাও কচুরিপানা
বেগনী ফুল ধরেছে।
রাস্তায় ঝুঁকে পড়া শুকনো কলমিলতা
মাড়িয়ে গেল ভ্যান।
দিনের শেষে পাকুড়তলায় আগুন জ্বালিয়েছে পরান বোষ্টুম
মাটির হাঁড়িতে পেসাদ নাড়ছে কাঠি দিয়ে,
গুনগুনিয়ে গাইছে, কাছে নাও গো দয়াল
এ পরবাস, বড় দীর্ঘ, বড় দীর্ঘ পরবাস
কল্যাণীয়াসু
কি জানি, যদি দরকারে লাগে কোনোদিন,
কোনোদিন যদি শখ হয়
ধ্বংসস্তূপ থেকে খুঁজে নিতে স্থলপদ্ম, প্রশস্তি-শিলা!
কখনো চাইনি সুবিচার, স্বীকৃতি।
চাইনি নিঝুম চোখের ইঙ্গিত অভিমান-সুখ --
কেন যে চাইনি সেই বড় জিজ্ঞাসা।
ফেলে আসা বৃষ্টিদিন আর কথোপকথনের গুরুভার,
অমন পালক শরীরে সামলাবে কি করে, তাই ভাবি --
পরিস্রুত মেলানকলি, যা আছে তোমার,
আঁচলের গিঁট খুলে তুলে দিও আমার স্নায়ুতে।
ভিক্ষা না দাও চিরায়ুষ্মতী, খুঁজে নিতে অধিকার দিও,
আমার বাগানে ভোরের টগরে তোমাকে অভাবনীয়।
এপিটাফ
রন্তকে দেওয়া হত দায়িত্ব সু-
পরিকল্পিতভাবে। তার যত খু-
ড়ো এবং জ্যাঠা আছে, তাহাদের মু-
খ চেয়ে সটান যেত চক্রের ব্যূ-
হে; সেথা সপ্তরথী, সুভদ্রা পু-
ত্র যে একা প্রাণপণ; বালিকাবধূ
ঘরে আছে একাকিনী, আহা বাছা উ-
ত্তরা, তুই ঢেকে রাখ যাবতীয় কু-
নজরের কোপ থেকে আর এই ঘু-
ণ ধরা সমাজ থেকে, তাহলেই বু-
ঝবি যে শান্তি পেল অভিমন্যু।
দেরী নেই
গায়ে লাগে বড্ড বেশি,
বোরোলীনে সারায় না সব।
দূরে দূরেই বসত গড়ি তার চে--
মধ্যে থাকুন শহরতলি, ভাগীরথীর নরম পলি
শালবন আর চার্চের গেট, হাজার রকম এটা সেটা
মোদ্দা কথা, দূরত্বটা এমন হবে,
ডাকলে যেন প্রতিধ্বনি সাড়া না দেয়।
তাই বলে কি ছুটিছাটায় থাকতে হবে অসাক্ষাতে?
কোনোদিনই আমার ছুটি তার ছুটিতে ভাব হবেনা?
পুজোয় না হোক, বড়দিনে?
তাতেও যদি বিঘ্নবিপদ, মনে মনে সান্ত্বনা থাক,
চালাঘরে সন্ধ্যামণি ফুটবে ঠিকই
চার পাঁচমাস ব্যবধানে,
অদর্শনের যন্ত্রণাটা আরো কিছু প্রবলা হোক,
ছলছুতোতে জড়িয়ে যাব আসছে বছর মার্চে।
অসময়ে এলে
কুয়োতলে আজ রাখা নেই আর বালতি ও দড়ি,
মিঠে জলটুকু -- শান্তির স্নান
শেষ ক'রে তার ঘরে ফিরে গেছে দেহাতী রাখাল।
মজা ছোটো নদী, বুজে আসা ক'টা ডোবা খাল বিল,
কৃপণ সবুজ তাও তো আগাছা কাঁটাগাছে ঢাকা,
কোথায় জুড়োবে এই খরতাপ শরীরের জ্বালা?
আমারো দুহাতে নুলোর কুষ্ঠ, বুক ভরে গেছে দগদগে ঘায়ে --
কোথায় তোমাকে স্থান দিই বলো?
সেই শেষে এলে, বড় অসময়ে।
সিন্দুক খুলে, দ্যাখো একফালি তারার আকাশ
রাখা ছিল কোণে লাল শালু মুড়ে,
জানিনা সেখানে দু চারটি তারা
অবশেষ কিছু আজো আছে কিনা,
যদি থাকে সেই চাঁদনি কিংবা প্রলেপের তারা, চন্দন-বাটি,
ব্যবহার কোরো।
এই অসময়ে কোথায়ই বা যাবে?
অতিষ্ঠ হলে ফিরে যেও তবু।
দূরে যেতে যদি মন চায় ফের, মায়ারং মেখে উড়ে যেও তুমি,
হাওয়ামহলের অন্তহীনতা
ভেসে ভেসে যেও--
দেওয়ালবিহীন গরিবখানাতে এই অসময়ে লুকিয়ে কোথায়
রাখবো তোমায়, শুধু বলে যেও--
অসময়ে এলে, অসময়ে এলে...
অসম্পূর্ণ
কতবার গলিত জোছনাধারা ভিজিয়ে দিল
চোখের পাতা মেঘের বালিশ...
সারারাত্তির কত তুষের দাহন,
বিরহী দিনের অগুরুগন্ধ খুঁজে
দিশেহারা দিন গেল কত রাজর্ষির--
শিল্পী সামান্য লোক, গরিব ও কুঁড়ে
রক্তিম মন্ত্রের সারি অকারণ ছিল তার প্রতীক্ষায়,
প্রসাদী ফুল চন্দন, লাল চেলির আশ্চর্য সুঘ্রাণ,
সময়োচিত নহবত সানাই --
উন্মোচিত হবার গাঢ় কোনো আকাঙ্ক্ষায়
অস্ফুটে স্থির ছিল, চিত্রার্পিত--
ছবিটাই শেষ হলনা শুধু
কিংবা বদলে গেল ক্যানভাস, রঙ তুলি চারকোল
ভাসান হয়ে গেল প্রতিমা
আছে দুঃখ
পথ ভুলে ঢুকে যায় মাঝামাঝি স্থানে--
আবছা আকাশ এসে কোণায় দাঁড়ায়
চোখে মুখে উদাসীন চুলে বিলি কাটে হা হা দিন
বাতাসের, বাবা মা-র, প্রিয় স্বজনের...
স্থির বুকে পকেটে বোতামে
মাথা গুঁজে ঠাঁই নেয় গ্রহণের রঙ।
পড়ে থাকে খালপাড়, চেনা সাঁকো
আরো দূরে শালবন, লাল মেঠোপথ
জীর্ণ আঁচলে দাগ তেল হলুদের
শ্রাবণী সবুজ কিছু, ভুল পরমাদ
অনন্ত শান্তির কথা জেগে থাকে গানে
তিরিশের শেষাশেষি হতভাগা জিতে নেয় ভাগ্যের
খেলা সুপার লোটোতে তার মিলে গেছে
যৌবন রাশিমালা, অপার অগাধ।
উৎকোচ
পাশেই দ্যাখো কাঁদছে গণেশ, এক্কেবারে আদুড় গা।
'আচ্ছা জ্বালা, হ'লটা কী, হোয়াই আর ইয়ু ক্রাইং সো?'
'আজ বিকেলে প্রেক্ষাগৃহে যোগেশ বাবুর মাইম শো।
টিকিট মোটে একখানা, তাও সরস্বতীর দখলে
কলম দেবার লোভ দেখালাম, এত্তগুলো চকোলেট --
তাও দিলনা, উলটে বরং খাগের কলম উঁচিয়ে
আচ্ছা করে দিল আমার নরম শুঁড়ে খুঁচিয়ে--'
'বাপের কাছে যা না কেন, কোথায় তিনি কী কচ্ছেন?'
'পাশ বালিশে হেলান দিয়ে কলকে হাতে ঝিমোচ্ছেন--
ড্রাগ কন্ট্রোল আপিসগুলো এক্কেবারে অকর্মা,
কাজের বেলা ঘোড়ার ডিম, আর মুখে বকরবকর, মা--'
'দেখছ ছেলের কাণ্ডখানা, বাপরে কী বাড়বাড়ন্ত,
বাপের নেশায় হাত দিতে চায়? সংবিধানে বারণ তো!!
আচ্ছা, আমার ব্রাউন ব্যাগে দ্যাখ যে সেকেণ্ড চেইন,
তারি মধ্যে আছে একটা টিকিট, বোধহয় কম্প্লিমেনটারি।
দু'শ' টাকা সঙ্গে রাখিস, ট্যাক্সি নেবে সন্দ নেই,
ইঁদুর নিয়ে ঢোকা এখন স্ট্রিক্টলি বারণ নন্দনে
তব দয়া দিয়ে
দীন তো তোমার দেখা পেল না
এখন তবে ব্যাপ্ত ঘাসে (ঘাস তো তোমার শাড়ির আঁচল)
রগড়িয়ে মুখ কাঁদব দেখো উথালপাথাল
তোমার বুকে লুকিয়ে রাখা আঁধারকোটর--
কেমন করে বুঝব বলো?
সুদূর ফুলের গন্ধ ভেবে ডুব দিয়েছি
কুঠিবাড়ির একলা ছাদে সন্ধেবেলা
দেবী তোমার দীঘল চোখে সজল ছায়া ঘনিয়েছিল
ছড়িয়েছিল ধ্যানের মাঠে।
সেই তো আমার মন্ত্র আমার প্রার্থনা আর নিত্যপূজা
ওই যে দ্যাখো দাক্ষায়ণীর নৌকো ভাসে
মাস্তুলে তার কাশের চামর
উপাসকের ভুল হয়ে যায় --
কোনটা যে মা, কে প্রতিমা, ভালবাসা বিশ্বরূপা
প্যালারামের ছড়া
বেগুনের কারবারে চূড়ান্ত নাস্তানা-
বুদ হয়ে ভেবেছিল এ লাইনে আর না --
মনে তবু জোর ছিল, কিছুতেই হার না
মেনে তাই ঠিক করে শাস্ত্রীয় বিধিতে
সংগীত শিখে নেবে। তার জেদাজিদিতে
সাবির আলি খাবি খান, বেনারস ঘরানা --
দুবেলা তালিম দেন সাপাট ও তরানা।
এভাবে ব্যাখ্যা করা, যদিও তা অনুচিত,
শিষ্যের গানে নাকি ক্ষত হয় ঠিক হৃৎ-
পিণ্ডের মাঝখানে, তারপর কি হল?
ওই যা যা হতে হয়, দুয়ো দুয়ো ছি হল।
বুকে নিয়ে অভিমান চলে আসে পানামা,
পুলিসের সাথে চলে কিছুদিন কানামা-
ছি এবং লুকোচুরি খেলাধুলো, তারপর
তার নানা দক্ষতা দেখেশুনে যারপর-
নাই খুশি হন যত আরক্ষা-কর্তা,
বেশি কিছু শাস্তি না, দু-চারটে চড়-থাপ্-
পড় দিয়ে পাঠালেন সংশোধনাগারে,
সেখানে শেখালো গান সা নি ধা পা মা গা রে।
কালোয়াতি সে গানের ভেবে দ্যাখো মহিমা,
পালোয়ান যত ছিল, কোরিয়া টু কোহিমা
সব্বাই কাত্ হল, মাত ছেলেছোকরা
শিশু বুড়ো মহিলা ও অসুস্থ লোকরা।
গানের থেরাপি দিয়ে রোগ দূরে ঠ্যালে সে
ডলারে ভিজিট নেয়, বসবাস প্যালেসে।
বিদেশে খ্যাতি না পেলে তোমরা তো মান দাও
না, -- এখন বসে বুড়ো আঙ্গুলে শান দাও...
প্যালারামের বাজে ছড়া
পেশোয়ার থেকে মেসো আর মাসি আসিলেন তাই দৌড়ে
মেয়ে সুন্দরী অতি শিক্ষিতা
কোরান হাদিশ ভগবৎ গীতা
সবই নাকি তাঁর ঠোঁটের আগায়, তবু বিয়ে গেল ভেস্তে,
পুরোহিত তবে কেন বলেছিল, এমন যুগল বেহেস্তে
মেলেনা দুখানি? সব ফাঁকা বুলি --
হুসেনের হৃদি আকুলিবিকুলি,
ঘটি বাটি হাঁড়ি জালা আলমারি ভরে ভরে রাখে দুঃখ,
বিয়ে ভাঙিবার কারণটি অতি সুগভীর আর সূক্ষ্ম।
পাড়া গাঁয়ে যার শ্বশুরের ভিটা,
আধুনিকা বধূ আলফা ও বিটা
জানে কি সে গাঁ-র? লোকে বলবে না এ কেমন ধারা বউ রে?
গ্রামাটিকালি যে রং এই বউ, এ যে নিতান্ত শহুরে।
পরামর্শ
নয়তো তোমার আরাধ্যদেব, রবীন্দ্রনাথ--
তেনার থেকে ধার করে ভাব দু চার লাইন টুকলি করা।
ক্যান রে বাবা?
শব্দ হবে দৈনন্দিন, ভীষণ রকম কলোকিয়াল,
দূর করে দে ওসব এবার, জীর্ণরীতি পুরাতনী।
রোজ যা করিস, ছুঁয়ে দেখিস, ভাবিস, পড়িস, সেসব কিছু আমদানী কর,
নয়তো তোর এই ন্যাকা ন্যাকা কাব্যকথা পড়বেনা কেউ।
জট পড়া এই সমাজটাকে প্রতীক করে কবিতাতেও জট লাগাবি।
গান তো শুনিস পূর্বা দামের?
গুড়বাদামের চেয়েও সে গান মিষ্টি মধু,
কিন্তু এমন সৃষ্টিছাড়া, ভুল উপমা পাগলপারা
লিখতে তো তোর লজ্জা করে। তাইতে তো তুই শয্যা 'পরে
চাদর মুড়ে লুকিয়ে থাকিস। ঢঙমাখা তোর কবিতাতে
বুকের দাঁড়ে দোল খেয়ে যায় গোপন পাখি,
সেই সোয়ালো, অবাক অবাক প্রিন্সও আসে রাখাল সেজে,
বই-এর পাতায় পা গুটিয়ে সেও বসে নেই।
স্বর্গে তো তার জায়গা পাকা, সেসব ছেড়ে পাগলা ছোঁড়া
রাতারাতি বাজিয়ে বাঁশি গাইছে কোরাস--
তার সাথে তুই সুর মিলিয়ে সারারাতের ভাঙাচোরায়, ভেসে যাওয়ায়,
দূরের মাদল, বাদল হাওয়ায় মলাট লাগাস ডায়েরিটাতে--
খেয়াল করে দু চোখ মেলে দ্যাখ তাকিয়ে,
এই যে আমি একটানেতে বলে গেলুম 'পাগলা ছোঁড়া'
তুই হলে তা লিখতিস কি?
তুই লিখতিস পাগলা ঝোরা, ঝর্ণা নদী কাঁপন লাগায় দখিন বায়ে--
বাদ দে ওসব ন্যাকাপনা, সহজ হবি, ওরে মন সহজ হবি--
তবেই তোমার কাব্যকলা এবং তোমার পাঠকসকল হাচের কুকুর,
কলকলাবে, লেজ নাড়াবে, লটপটে কান ঘুরবে দেখিস পায়ে পায়ে।
প্যারডি
তুমি তখন তোমার কার-এ, দুরন্ত লাক্সারী।
ঈর্ষা যেন অগ্নিসম জ্বলতেছিল বক্ষে মম
কী জমকালো পোশাক তোমার, কী যম-কালো রং
প্রথম দেখায় ভেবেছিলেম যাত্রাপাড়ার সং
ধনী বাপের কন্যা তুমি ভেবেছিলেম ঠিকই
সাধারণে পায়না ছুঁতে তোমার চুলের টিকি
যাহার এমন ধনের বাহার, মাতৃভাষা বাংলা তাহার?
মনে মনে ভাবি এসব কল্পনা জাল বুনি
ভাষার পরিবর্তে শুধু হাসির লহর শুনি
দেখি সহসা কার থেমে গেল এসে আমার কাছে
দরজা খুলে নেমে এলে হিরোইনের ধাঁচে
পার্লারিত চারুকলা মাথা থেকে পায়ের তলা
হেনকালে বিনা মেঘে হল বজ্রপাত
'আমায় বিয়ে করো' বলে বাড়িয়ে দিলে হাত
মরি এ কী কথা রাজেন্দ্রাণী, "আমায় করো বিয়ে'
শুনে ক্ষণকালের তরে উঠি শিরশিরিয়ে
মধুর ভাষণ এমনতর লাগল কানে কী সুন্দর
মার্জারের ললাট পরে ছিঁড়ল তবে শিকে?
পুলিস ভুলে বক্ষে তুলে নিলাম বধূটিকে।
যবে পাত্রীখানি ঘরে এনে উজাড় করি এ কী
সুধামুখীর বচন তো নয়, সাপের ফণা দেখি
স্বপ্ন দেখি যাকে ঘিরে, সর্প হয়ে এল কি রে?
তখন ভাসি চোখের জলে দুটি নয়ন ভরে
তোমায় কেন নিইনি আমি আগেই পরখ করে!
Thursday, March 6, 2008
লিমেরিক ২
গিন্নি ধমকে বলে, ঝাড়বাতি নিভাতে
চড়া আলো ভালো নয়
মোমবাতি জ্বালো নয়--
ইনফেকশন আছে কনজাংটিভাতে
লিমেরিক ১
রাতদুপুরে তালপুকুরে নাচছিল তিন ডাইনি
রামের চরণ করছি শরণ, খাচ্ছিনা জিন খাইনি
জোছনাগুলো পড়ছে খসে মোছনা ওদের রবার ঘষে
আঁধার থাকুক বনবাদাড়ে, চাইছিনা দিন চাইনি।
অনৈতিহাসিক
ব্যস্ত হলেন দেখে ছেলের হস্ত ও বিধিলিপি
বললে, 'মানিক, ও খোকা রে
খানিক শিখো কী প্রকারে
শিখ্রা বানায় শিক কাবাব আর রাবড়ি মালাই জিলিপি।'
কজন খেলেন মাটন কষা এবং খেতে পাননি কে
পশ্ল কানে এসব হিসেব, বসল পুরু আহ্নিকে।
পুজোর আগে পারণ থাকে
খাদ্যগ্রহণ বারণ থাকে
বাজে হলেও নিয়মটাকে করবেন অমান্যি কে?
আত্মজীবনীর খণ্ডাংশ
যদি দেখি কোনো পুকুরের জল ঘোলা
মুখেতে জপিয়া রাধে ও কেষ্ট
মাছ ধরিবারে হই সচেষ্ট
(তবে) ছিপখানি ফেলি হাই তুলি তুলি মাছ নাহি পাই যদি
আদর করিয়া নচ্ছারদিগে আমি 'শালা' সম্বোধি
পানি না ছুঁয়েই মাছ ধরা বাবা
খাটুনির কাজ, বাহবা বাহবা
কে না জানে বলো ইলিশ মত্স্য পুরাকাল হতে করে নমস্য
দুনিয়ার যত কাঙালী বাঙালী, তাহাদের ধন চুরি
(তবু) তাহার গন্ধে পরমানন্দে আমি বিব পরে ঘুরি।
ফিসফিস করে মাছের কথাই বলি
মিটমিট করে মাটনের পানে চাই
দেখি ভাণ্ডারে নাই আণ্ডা রে
কী খেলে এ প্রাণ হবে ঠাণ্ডা রে
ভাবিয়া ভাবিয়া পকেট চাপিয়া নিরামিষ হাতড়াই।
হাহাকার করে কেঁদে ওঠে জিভ তাই,
কোলে টেনে নিই টেলিফোনটাকে,
কাছাকাছি যত বন্ধুরা থাকে
ডাকিয়া তাদের খোসামোদ করি, কভু পিঠ চাপড়াই।
বলি তেনাদের, বেশ লোক তোরা, আছে মনোহর কত রেস্তরাঁ
ক্ষুন্নিবারণ করিব সেখানে, মিষ্টবচন কহি কানে কানে--
আজ তুই খাওয়া, নেক্সট মোলাকাতে আমিই মেটাবো বিল,
তোর মতো আর এমন উদার, কে আছে দরাজ দিল।
উপসংহার? আভি মত্ পুছো
পেটে ডন দেয় দু ডজন ছুঁচো
খেয়ে আসি আগে, কার্যঞ্চাগে, বাকি কথা থাক বাকি
আপাতত হাতে মেনুসংহিতা, আছি তাতে মুখ ঢাকি।
[বিঃ দ্রঃ] ১। কার্যঞ্চাগে মানে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না। কৌতূহল দমন করতে না পারলে কাক্কেশ্বরকে ফোন করুন।
২। মেনুসংহিতা বা মেনুকার্ড আরবী বা উর্দুর মতো ডান দিক থেকে বাঁ দিকে পড়বেন। নয়তো অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
02 Nov 2007