Tuesday, March 25, 2008

যোধা আকবর সংবাদ

ফুলবাগিচায় থাকেননা আর
থাকেন আরাম-বাগিচায়
তাঁর কাছে যেই খাস বেয়ারা
হেঁসেল ঘরের চাবি চায়

বলেন রানি ভীষণ কোপে
'চাইছি পরিবর্তনে
খেতেই হবে মোগল খানা
এমন কোনো শর্ত নেই'

তারপরে তো চাঁদ উঠেছে
আবির মাখা ফাগ রাতে,
চমকে চেয়ে দেখেন রাজা
তুর্কি নাচন ঘাগরাতে

'সৈন্যরা সব মুরগি পোষে'
বলেন যোধা, আকবরে--
'ফ্লু হয়ে কি মরব শেষে
ক্যামনে হেথায় থাকব রে?'

রানির জিভের খবরখানা
রাজার বেশি রাখবে কে? (দুষ্ট পাঠক, অন্য অর্থ করবেন না)
রোজই পাতে মুরগি-ভাতে--
থাকেন রানি ঘাড় বেঁকে।

কাজেই তখন নিদান দিলেন
হুমায়ুনের বংশধর,
'মুরগি নিয়ে আর্গু বৃথা
তার চে' বরং হংস ধর'

কাছেই ছিলেন বৈরাম খাঁ
বলেন তিনি সস্নেহে,
'ঠাণ্ডা মাথায় ভাব যোধা মা,
এত্ত অধীর হোস নে হে...

ব্যারাম হলে ওষুধ আছে
টোটকা কিছু শিখে নে
আরামবাগের রানিমা গো
ভয় পেয়ো না চিকেনে...'

Friday, March 7, 2008

প্রত্নতত্ত্ব

চূর্ণীর পরপারে ইতিহাস আঁকা--

লতাপাতা জটাজাল গোপন কুটির
তেজীয়ান চাষীনেতা, দূতিয়ালি নানা মাধ্যমে,
কাল রাতে ছাই হবে কোন নীলকুঠি...

মনের ওপর এত উর্বর পলি,
যেন সে অগ্নিদিন কালকেরই কথা।

যুগান্ত কেটে যায়--
সোনালী ধানের ক্ষেতে দুধ জমে ঋতুতে ঋতুতে।

আজও বুঝি রানাঘাটে সেই ছবি স্থির হয়ে আছে

কাদামাখা নদীপাড়, বুড়ো মাঝি,
মাছের চুবড়ি নিয়ে জেলে ও জেলেনী, পাটের আড়তদার
সাইকেল আরোহী, ভিড়ের গাদায় আরো কত লোক কত কিসিমের।

একতারা বেজে ওঠে
ভবনদী পার করে দাও গো পাটনী...

ওইপারে তাঁত চলে খটাখট, জরিপাড় ফুলকাটা শাড়ি
চুড়ি বেলোয়ারি, বিচিত্র মলম সব শোভিতেছে শোকেসে শোকেসে।
দেওয়ালে কোয়েল মল্লিক ঝুলে আছে প্রেমিকের সনে।

হঠাত খবর পাই মনে
এই আমি আর সেই হরিদাস পাল, উভয়ের কোনো ভেদ নাই।
উভয়েরই ছেঁড়া ছাতা, উভয়েই কল্পনাবিলাসী।

সব মিথ্যে সব ইতিহাস
ইতিহাস ধুয়ে গেছে চূর্ণীর জলে...

নীল খাম

কত দূর সন্ধ্যায় একা আছো রহস্যময়ী
একবার পূর্ণ হয়ে দেখা দাও,
কাছে এসো দুটো চারটে যা হোক,
কথা বলো জানো তো সবই...

কাজে নিষ্পেষিত হতে হতে ভাবি
কাল ঠিক খোলা যাবে তোমার চিঠির খাম
কাল ঠিক জেনে নেবো নির্দেশাবলী
অবশ্যপালনীয় আর কী কী আছে।
পুজোর পলাশফুল কোন বই-এ রাখা আছে
খুঁজে দিতে হবে?

ভয় হয় জানো...
তোমার অক্ষর তো, অভিমানী তোমার মতোই--
খুলে যদি দেখি-- ওরাও করেছে আড়ি,
সাদা পাতা ফেলে রেখে
তোমার কাছেই যদি ফিরে গিয়ে থাকে...

চরৈবেতি

কাল বাড়ি ফিরে দেখি তোমার পোস্টকার্ড,
কত দূর পাড়ি দিয়ে, কত দূরের গন্ধ সাথে নিয়ে --

পিয়ানো শিখছো,
নোটেশন না দেখেই বাজাতে পারো
যখন গাছেরা ঘুমোয়-এর নির্ভুল সুর....

ভারি ভাল লাগল,
চুপ করে বসে রইলাম অনেকক্ষণ...
ফিসফিস করে জানতে ইচ্ছে হল
যখন গাছেরা ঘুমোয়, তখন কী ভাবো...
তোমার সেই অন্তমিল দিয়ে কথা বলবার অভ্যেস....
ওভাবেই বলো এখনো?

আসলে হয়েছে কি, কাল পুরনো বইপত্তর
ঘাঁটতে গিয়ে দেখি তোমার একটি চিরকুট।
অমনি গলার কাছে দপদপ, শিরা টানটান।
বুঝলাম রক্ত বইছে দ্রুত--
দুভাঁজ করা ছোট্ট কাগজ,
তোমার ভালবাসার কথকতা,
সেই কপালে হাত চাপড়ে হায় ভগবান বলা,
তোমার নিমগ্ন মুখ
সব এক নিমেষে ভিড় করে এল...

বিশ্বাস করো, ওই এক নিমেষই,
এর বেশি ভাবা সংবিধানে নেই।

শুধু স্থলপদ্ম ফুটে আছে, এমনটা বোধ হলে
নিয়মবিরুদ্ধ ভাবে তোমার গন্ধ পাই...

সন্ধ্যা-ছবি

হলুদ আলো মাখা শীতের সর্ষেভূমি,
তার ধার ঘেঁষে সার সার মৌমাছির বাক্স,
সারাদিন ফুলে ফুলে উড়ে ক্লান্ত ওরা ফিরছে
অন্যের বানিয়ে তোলা বাসাতে

আদিবাসী হস্টেলের বিকেল জানলায় মুখ রেখে
দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা,
ভাবছে তীর ধনুক, নদী, মায়ের মুখ
বেগুনক্ষেতে লুকনো তার ছেলেবেলা

সন্ধ্যা টাঙনের নড়বড়ে ব্রিজ পেরিয়ে
ভটভটি ভ্যানে চেপে বসল দুটি ঘোমটা পরা বউ।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে দ্রুত চলেছে যার যার শ্বশুর ঘরে।
হাতে ওষুধের পুঁটুলি মুঠো করে ধরা।
পাটপচা জল শুকোয়নি এখনো, কোথাও কোথাও কচুরিপানা
বেগনী ফুল ধরেছে।
রাস্তায় ঝুঁকে পড়া শুকনো কলমিলতা
মাড়িয়ে গেল ভ্যান।

দিনের শেষে পাকুড়তলায় আগুন জ্বালিয়েছে পরান বোষ্টুম
মাটির হাঁড়িতে পেসাদ নাড়ছে কাঠি দিয়ে,
গুনগুনিয়ে গাইছে, কাছে নাও গো দয়াল
এ পরবাস, বড় দীর্ঘ, বড় দীর্ঘ পরবাস

কল্যাণীয়াসু

অনুপম বিকেলগুলি সযত্নে রেখেছি কল্যাণী
কি জানি, যদি দরকারে লাগে কোনোদিন,
কোনোদিন যদি শখ হয়
ধ্বংসস্তূপ থেকে খুঁজে নিতে স্থলপদ্ম, প্রশস্তি-শিলা!

কখনো চাইনি সুবিচার, স্বীকৃতি।
চাইনি নিঝুম চোখের ইঙ্গিত অভিমান-সুখ --
কেন যে চাইনি সেই বড় জিজ্ঞাসা।
ফেলে আসা বৃষ্টিদিন আর কথোপকথনের গুরুভার,
অমন পালক শরীরে সামলাবে কি করে, তাই ভাবি --

পরিস্রুত মেলানকলি, যা আছে তোমার,
আঁচলের গিঁট খুলে তুলে দিও আমার স্নায়ুতে।

ভিক্ষা না দাও চিরায়ুষ্মতী, খুঁজে নিতে অধিকার দিও,
আমার বাগানে ভোরের টগরে তোমাকে অভাবনীয়।

এপিটাফ

নিষ্ঠায় বিশ্বাসে বরাবরই দু-
রন্তকে দেওয়া হত দায়িত্ব সু-
পরিকল্পিতভাবে। তার যত খু-
ড়ো এবং জ্যাঠা আছে, তাহাদের মু-
খ চেয়ে সটান যেত চক্রের ব্যূ-
হে; সেথা সপ্তরথী, সুভদ্রা পু-
ত্র যে একা প্রাণপণ; বালিকাবধূ
ঘরে আছে একাকিনী, আহা বাছা উ-
ত্তরা, তুই ঢেকে রাখ যাবতীয় কু-
নজরের কোপ থেকে আর এই ঘু-
ণ ধরা সমাজ থেকে, তাহলেই বু-
ঝবি যে শান্তি পেল অভিমন্যু।

দেরী নেই

প্রতিদিনের কাটাছেঁড়া ওঠাপড়া মান অভিমান
গায়ে লাগে বড্ড বেশি,
বোরোলীনে সারায় না সব।
দূরে দূরেই বসত গড়ি তার চে--

মধ্যে থাকুন শহরতলি, ভাগীরথীর নরম পলি
শালবন আর চার্চের গেট, হাজার রকম এটা সেটা
মোদ্দা কথা, দূরত্বটা এমন হবে,
ডাকলে যেন প্রতিধ্বনি সাড়া না দেয়।

তাই বলে কি ছুটিছাটায় থাকতে হবে অসাক্ষাতে?
কোনোদিনই আমার ছুটি তার ছুটিতে ভাব হবেনা?
পুজোয় না হোক, বড়দিনে?

তাতেও যদি বিঘ্নবিপদ, মনে মনে সান্ত্বনা থাক,
চালাঘরে সন্ধ্যামণি ফুটবে ঠিকই
চার পাঁচমাস ব্যবধানে,
অদর্শনের যন্ত্রণাটা আরো কিছু প্রবলা হোক,
ছলছুতোতে জড়িয়ে যাব আসছে বছর মার্চে।

অসময়ে এলে

সেই শেষে এলে, অসময়ে এলে।

কুয়োতলে আজ রাখা নেই আর বালতি ও দড়ি,
মিঠে জলটুকু -- শান্তির স্নান
শেষ ক'রে তার ঘরে ফিরে গেছে দেহাতী রাখাল।
মজা ছোটো নদী, বুজে আসা ক'টা ডোবা খাল বিল,
কৃপণ সবুজ তাও তো আগাছা কাঁটাগাছে ঢাকা,
কোথায় জুড়োবে এই খরতাপ শরীরের জ্বালা?
আমারো দুহাতে নুলোর কুষ্ঠ, বুক ভরে গেছে দগদগে ঘায়ে --
কোথায় তোমাকে স্থান দিই বলো?

সেই শেষে এলে, বড় অসময়ে।

সিন্দুক খুলে, দ্যাখো একফালি তারার আকাশ
রাখা ছিল কোণে লাল শালু মুড়ে,
জানিনা সেখানে দু চারটি তারা
অবশেষ কিছু আজো আছে কিনা,
যদি থাকে সেই চাঁদনি কিংবা প্রলেপের তারা, চন্দন-বাটি,
ব্যবহার কোরো।
এই অসময়ে কোথায়ই বা যাবে?

অতিষ্ঠ হলে ফিরে যেও তবু।
দূরে যেতে যদি মন চায় ফের, মায়ারং মেখে উড়ে যেও তুমি,
হাওয়ামহলের অন্তহীনতা
ভেসে ভেসে যেও--
দেওয়ালবিহীন গরিবখানাতে এই অসময়ে লুকিয়ে কোথায়
রাখবো তোমায়, শুধু বলে যেও--

অসময়ে এলে, অসময়ে এলে...

অসম্পূর্ণ

তারপর কত সূর্য দিগন্ত পার হল,
কতবার গলিত জোছনাধারা ভিজিয়ে দিল
চোখের পাতা মেঘের বালিশ...
সারারাত্তির কত তুষের দাহন,
বিরহী দিনের অগুরুগন্ধ খুঁজে
দিশেহারা দিন গেল কত রাজর্ষির--

শিল্পী সামান্য লোক, গরিব ও কুঁড়ে

রক্তিম মন্ত্রের সারি অকারণ ছিল তার প্রতীক্ষায়,
প্রসাদী ফুল চন্দন, লাল চেলির আশ্চর্য সুঘ্রাণ,
সময়োচিত নহবত সানাই --
উন্মোচিত হবার গাঢ় কোনো আকাঙ্ক্ষায়
অস্ফুটে স্থির ছিল, চিত্রার্পিত--

ছবিটাই শেষ হলনা শুধু
কিংবা বদলে গেল ক্যানভাস, রঙ তুলি চারকোল
ভাসান হয়ে গেল প্রতিমা

আছে দুঃখ

বাঁধাইএর গোলমালে লোকটার জীবনের শেষপাতা
পথ ভুলে ঢুকে যায় মাঝামাঝি স্থানে--

আবছা আকাশ এসে কোণায় দাঁড়ায়
চোখে মুখে উদাসীন চুলে বিলি কাটে হা হা দিন
বাতাসের, বাবা মা-র, প্রিয় স্বজনের...
স্থির বুকে পকেটে বোতামে
মাথা গুঁজে ঠাঁই নেয় গ্রহণের রঙ।

পড়ে থাকে খালপাড়, চেনা সাঁকো
আরো দূরে শালবন, লাল মেঠোপথ
জীর্ণ আঁচলে দাগ তেল হলুদের
শ্রাবণী সবুজ কিছু, ভুল পরমাদ

অনন্ত শান্তির কথা জেগে থাকে গানে

তিরিশের শেষাশেষি হতভাগা জিতে নেয় ভাগ্যের
খেলা সুপার লোটোতে তার মিলে গেছে
যৌবন রাশিমালা, অপার অগাধ।

উৎকোচ

বাপের বাড়ির কলতলাতে প্যাচাল পাড়েন মা দুর্গা
পাশেই দ্যাখো কাঁদছে গণেশ, এক্কেবারে আদুড় গা।
'আচ্ছা জ্বালা, হ'লটা কী, হোয়াই আর ইয়ু ক্রাইং সো?'
'আজ বিকেলে প্রেক্ষাগৃহে যোগেশ বাবুর মাইম শো।
টিকিট মোটে একখানা, তাও সরস্বতীর দখলে
কলম দেবার লোভ দেখালাম, এত্তগুলো চকোলেট --
তাও দিলনা, উলটে বরং খাগের কলম উঁচিয়ে
আচ্ছা করে দিল আমার নরম শুঁড়ে খুঁচিয়ে--'
'বাপের কাছে যা না কেন, কোথায় তিনি কী কচ্ছেন?'
'পাশ বালিশে হেলান দিয়ে কলকে হাতে ঝিমোচ্ছেন--
ড্রাগ কন্ট্রোল আপিসগুলো এক্কেবারে অকর্মা,
কাজের বেলা ঘোড়ার ডিম, আর মুখে বকরবকর, মা--'
'দেখছ ছেলের কাণ্ডখানা, বাপরে কী বাড়বাড়ন্ত,
বাপের নেশায় হাত দিতে চায়? সংবিধানে বারণ তো!!
আচ্ছা, আমার ব্রাউন ব্যাগে দ্যাখ যে সেকেণ্ড চেইন,
তারি মধ্যে আছে একটা টিকিট, বোধহয় কম্প্লিমেনটারি।
দু'শ' টাকা সঙ্গে রাখিস, ট্যাক্সি নেবে সন্দ নেই,
ইঁদুর নিয়ে ঢোকা এখন স্ট্রিক্টলি বারণ নন্দনে

তব দয়া দিয়ে

দিন গেল গো দয়াময়ী, আরেকটা দিন বৃথাই গেল,
দীন তো তোমার দেখা পেল না
এখন তবে ব্যাপ্ত ঘাসে (ঘাস তো তোমার শাড়ির আঁচল)
রগড়িয়ে মুখ কাঁদব দেখো উথালপাথাল

তোমার বুকে লুকিয়ে রাখা আঁধারকোটর--
কেমন করে বুঝব বলো?
সুদূর ফুলের গন্ধ ভেবে ডুব দিয়েছি

কুঠিবাড়ির একলা ছাদে সন্ধেবেলা
দেবী তোমার দীঘল চোখে সজল ছায়া ঘনিয়েছিল
ছড়িয়েছিল ধ্যানের মাঠে।
সেই তো আমার মন্ত্র আমার প্রার্থনা আর নিত্যপূজা

ওই যে দ্যাখো দাক্ষায়ণীর নৌকো ভাসে
মাস্তুলে তার কাশের চামর
উপাসকের ভুল হয়ে যায় --
কোনটা যে মা, কে প্রতিমা, ভালবাসা বিশ্বরূপা

প্যালারামের ছড়া

ডায়মন হারবারে ছিল তার আস্তানা
বেগুনের কারবারে চূড়ান্ত নাস্তানা-
বুদ হয়ে ভেবেছিল এ লাইনে আর না --
মনে তবু জোর ছিল, কিছুতেই হার না
মেনে তাই ঠিক করে শাস্ত্রীয় বিধিতে
সংগীত শিখে নেবে। তার জেদাজিদিতে
সাবির আলি খাবি খান, বেনারস ঘরানা --
দুবেলা তালিম দেন সাপাট ও তরানা।
এভাবে ব্যাখ্যা করা, যদিও তা অনুচিত,
শিষ্যের গানে নাকি ক্ষত হয় ঠিক হৃৎ-
পিণ্ডের মাঝখানে, তারপর কি হল?
ওই যা যা হতে হয়, দুয়ো দুয়ো ছি হল।
বুকে নিয়ে অভিমান চলে আসে পানামা,
পুলিসের সাথে চলে কিছুদিন কানামা-
ছি এবং লুকোচুরি খেলাধুলো, তারপর
তার নানা দক্ষতা দেখেশুনে যারপর-
নাই খুশি হন যত আরক্ষা-কর্তা,
বেশি কিছু শাস্তি না, দু-চারটে চড়-থাপ্-
পড় দিয়ে পাঠালেন সংশোধনাগারে,
সেখানে শেখালো গান সা নি ধা পা মা গা রে।
কালোয়াতি সে গানের ভেবে দ্যাখো মহিমা,
পালোয়ান যত ছিল, কোরিয়া টু কোহিমা
সব্বাই কাত্ হল, মাত ছেলেছোকরা
শিশু বুড়ো মহিলা ও অসুস্থ লোকরা।
গানের থেরাপি দিয়ে রোগ দূরে ঠ্যালে সে
ডলারে ভিজিট নেয়, বসবাস প্যালেসে।
বিদেশে খ্যাতি না পেলে তোমরা তো মান দাও
না, -- এখন বসে বুড়ো আঙ্গুলে শান দাও...

প্যালারামের বাজে ছড়া

হুসেন শাহের পাকাদেখা বেলা তিন ঘটিকায়, গৌড়ে
পেশোয়ার থেকে মেসো আর মাসি আসিলেন তাই দৌড়ে
মেয়ে সুন্দরী অতি শিক্ষিতা
কোরান হাদিশ ভগবৎ গীতা
সবই নাকি তাঁর ঠোঁটের আগায়, তবু বিয়ে গেল ভেস্তে,
পুরোহিত তবে কেন বলেছিল, এমন যুগল বেহেস্তে
মেলেনা দুখানি? সব ফাঁকা বুলি --
হুসেনের হৃদি আকুলিবিকুলি,
ঘটি বাটি হাঁড়ি জালা আলমারি ভরে ভরে রাখে দুঃখ,
বিয়ে ভাঙিবার কারণটি অতি সুগভীর আর সূক্ষ্ম।
পাড়া গাঁয়ে যার শ্বশুরের ভিটা,
আধুনিকা বধূ আলফা ও বিটা
জানে কি সে গাঁ-র? লোকে বলবে না এ কেমন ধারা বউ রে?
গ্রামাটিকালি যে রং এই বউ, এ যে নিতান্ত শহুরে।

পরামর্শ

ওঃ তোর কবিতা? তার মানে তো চলন্তিকা ঘেঁটে কিছু সংস্কৃত শব্দচয়ন।
নয়তো তোমার আরাধ্যদেব, রবীন্দ্রনাথ--
তেনার থেকে ধার করে ভাব দু চার লাইন টুকলি করা।
ক্যান রে বাবা?
শব্দ হবে দৈনন্দিন, ভীষণ রকম কলোকিয়াল,
দূর করে দে ওসব এবার, জীর্ণরীতি পুরাতনী।
রোজ যা করিস, ছুঁয়ে দেখিস, ভাবিস, পড়িস, সেসব কিছু আমদানী কর,
নয়তো তোর এই ন্যাকা ন্যাকা কাব্যকথা পড়বেনা কেউ।
জট পড়া এই সমাজটাকে প্রতীক করে কবিতাতেও জট লাগাবি।

গান তো শুনিস পূর্বা দামের?
গুড়বাদামের চেয়েও সে গান মিষ্টি মধু,
কিন্তু এমন সৃষ্টিছাড়া, ভুল উপমা পাগলপারা
লিখতে তো তোর লজ্জা করে। তাইতে তো তুই শয্যা 'পরে
চাদর মুড়ে লুকিয়ে থাকিস। ঢঙমাখা তোর কবিতাতে
বুকের দাঁড়ে দোল খেয়ে যায় গোপন পাখি,
সেই সোয়ালো, অবাক অবাক প্রিন্সও আসে রাখাল সেজে,
বই-এর পাতায় পা গুটিয়ে সেও বসে নেই।
স্বর্গে তো তার জায়গা পাকা, সেসব ছেড়ে পাগলা ছোঁড়া
রাতারাতি বাজিয়ে বাঁশি গাইছে কোরাস--
তার সাথে তুই সুর মিলিয়ে সারারাতের ভাঙাচোরায়, ভেসে যাওয়ায়,
দূরের মাদল, বাদল হাওয়ায় মলাট লাগাস ডায়েরিটাতে--
খেয়াল করে দু চোখ মেলে দ্যাখ তাকিয়ে,
এই যে আমি একটানেতে বলে গেলুম 'পাগলা ছোঁড়া'
তুই হলে তা লিখতিস কি?
তুই লিখতিস পাগলা ঝোরা, ঝর্ণা নদী কাঁপন লাগায় দখিন বায়ে--
বাদ দে ওসব ন্যাকাপনা, সহজ হবি, ওরে মন সহজ হবি--
তবেই তোমার কাব্যকলা এবং তোমার পাঠকসকল হাচের কুকুর,
কলকলাবে, লেজ নাড়াবে, লটপটে কান ঘুরবে দেখিস পায়ে পায়ে।

প্যারডি

আমি রিক্সা চেপে ফিরতেছিলেম আপিস কেটে বাড়ি
তুমি তখন তোমার কার-এ, দুরন্ত লাক্সারী।
ঈর্ষা যেন অগ্নিসম জ্বলতেছিল বক্ষে মম
কী জমকালো পোশাক তোমার, কী যম-কালো রং
প্রথম দেখায় ভেবেছিলেম যাত্রাপাড়ার সং

ধনী বাপের কন্যা তুমি ভেবেছিলেম ঠিকই
সাধারণে পায়না ছুঁতে তোমার চুলের টিকি
যাহার এমন ধনের বাহার, মাতৃভাষা বাংলা তাহার?
মনে মনে ভাবি এসব কল্পনা জাল বুনি
ভাষার পরিবর্তে শুধু হাসির লহর শুনি

দেখি সহসা কার থেমে গেল এসে আমার কাছে
দরজা খুলে নেমে এলে হিরোইনের ধাঁচে
পার্লারিত চারুকলা মাথা থেকে পায়ের তলা
হেনকালে বিনা মেঘে হল বজ্রপাত
'আমায় বিয়ে করো' বলে বাড়িয়ে দিলে হাত

মরি এ কী কথা রাজেন্দ্রাণী, "আমায় করো বিয়ে'
শুনে ক্ষণকালের তরে উঠি শিরশিরিয়ে
মধুর ভাষণ এমনতর লাগল কানে কী সুন্দর
মার্জারের ললাট পরে ছিঁড়ল তবে শিকে?
পুলিস ভুলে বক্ষে তুলে নিলাম বধূটিকে।

যবে পাত্রীখানি ঘরে এনে উজাড় করি এ কী
সুধামুখীর বচন তো নয়, সাপের ফণা দেখি
স্বপ্ন দেখি যাকে ঘিরে, সর্প হয়ে এল কি রে?
তখন ভাসি চোখের জলে দুটি নয়ন ভরে
তোমায় কেন নিইনি আমি আগেই পরখ করে!

Thursday, March 6, 2008

লিমেরিক ২

মগডালে একানড়ে খাচ্ছিল ঘি-ভাতে
গিন্নি ধমকে বলে, ঝাড়বাতি নিভাতে
চড়া আলো ভালো নয়
মোমবাতি জ্বালো নয়--
ইনফেকশন আছে কনজাংটিভাতে

লিমেরিক ১

রাতদুপুরে তালপুকুরে নাচছিল তিন ডাইনি

রামের চরণ করছি শরণ, খাচ্ছিনা জিন খাইনি

জোছনাগুলো পড়ছে খসে মোছনা ওদের রবার ঘষে

আঁধার থাকুক বনবাদাড়ে, চাইছিনা দিন চাইনি।

অনৈতিহাসিক

মহান গ্রীসে সেকেন্দারের পিতা শ্রীমান ফিলিপ-ই
ব্যস্ত হলেন দেখে ছেলের হস্ত ও বিধিলিপি
বললে, 'মানিক, ও খোকা রে
খানিক শিখো কী প্রকারে
শিখ্রা বানায় শিক কাবাব আর রাবড়ি মালাই জিলিপি।'

কজন খেলেন মাটন কষা এবং খেতে পাননি কে
পশ্ল কানে এসব হিসেব, বসল পুরু আহ্নিকে।
পুজোর আগে পারণ থাকে
খাদ্যগ্রহণ বারণ থাকে
বাজে হলেও নিয়মটাকে করবেন অমান্যি কে?

আত্মজীবনীর খণ্ডাংশ

আমি স্বভাবে বড়ই নোলা
যদি দেখি কোনো পুকুরের জল ঘোলা
মুখেতে জপিয়া রাধে ও কেষ্ট
মাছ ধরিবারে হই সচেষ্ট
(তবে) ছিপখানি ফেলি হাই তুলি তুলি মাছ নাহি পাই যদি
আদর করিয়া নচ্ছারদিগে আমি 'শালা' সম্বোধি
পানি না ছুঁয়েই মাছ ধরা বাবা
খাটুনির কাজ, বাহবা বাহবা
কে না জানে বলো ইলিশ মত্স্য পুরাকাল হতে করে নমস্য
দুনিয়ার যত কাঙালী বাঙালী, তাহাদের ধন চুরি
(তবু) তাহার গন্ধে পরমানন্দে আমি বিব পরে ঘুরি।
ফিসফিস করে মাছের কথাই বলি
মিটমিট করে মাটনের পানে চাই
দেখি ভাণ্ডারে নাই আণ্ডা রে
কী খেলে এ প্রাণ হবে ঠাণ্ডা রে
ভাবিয়া ভাবিয়া পকেট চাপিয়া নিরামিষ হাতড়াই।
হাহাকার করে কেঁদে ওঠে জিভ তাই,
কোলে টেনে নিই টেলিফোনটাকে,
কাছাকাছি যত বন্ধুরা থাকে
ডাকিয়া তাদের খোসামোদ করি, কভু পিঠ চাপড়াই।
বলি তেনাদের, বেশ লোক তোরা, আছে মনোহর কত রেস্তরাঁ
ক্ষুন্নিবারণ করিব সেখানে, মিষ্টবচন কহি কানে কানে--
আজ তুই খাওয়া, নেক্সট মোলাকাতে আমিই মেটাবো বিল,
তোর মতো আর এমন উদার, কে আছে দরাজ দিল।
উপসংহার? আভি মত্ পুছো
পেটে ডন দেয় দু ডজন ছুঁচো
খেয়ে আসি আগে, কার্যঞ্চাগে, বাকি কথা থাক বাকি
আপাতত হাতে মেনুসংহিতা, আছি তাতে মুখ ঢাকি।

[বিঃ দ্রঃ] ১। কার্যঞ্চাগে মানে আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না। কৌতূহল দমন করতে না পারলে কাক্কেশ্বরকে ফোন করুন।
২। মেনুসংহিতা বা মেনুকার্ড আরবী বা উর্দুর মতো ডান দিক থেকে বাঁ দিকে পড়বেন। নয়তো অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
02 Nov 2007