Friday, May 23, 2008
বাউল
সর্বদা মন নেচেই আছে, কিছুই তো হারায়নি
মাঝে মাঝে এদিক ওদিক
বনপাহাড়ি চাঁদের নদীর
ঢেউ কুড়িয়ে দিন কেটেছে, পিছনে তাকায়নি
শেষে যখন মনে হল কিচ্ছুটি বাদ যায়নি
ইচ্ছেমতো পাওনাতে কেউ গোলমাল বাধায়নি
ভেঙে গেল ভুলের বোঝা
সব পাওয়া কি এতই সোজা
রূপ-শালিকে ধান খেয়েছে, অরূপরতন পায়নি
Tuesday, May 20, 2008
বিরাজমোহিনী
তোমার ওখানে বৃষ্টি তুমুল
কাপড় শুকানো ভারি হল দায়
বড়ি ও আচার তথৈবচ
সিঁড়ি ভাঙতেই হাঁপ ধরে যায়
তবু যেন আছো শান্তির কাছে
যেখানে সবুজ প্রাণের আরাম
মায়াকলমের চিত্রবন্ধে , অধরামাধুরী
ঠিক ধরা আছে প্রতিটি ছত্রে
লেবু কামিনীর পত্রে পত্রে জলজ সুরভি
ছল খুঁজে নিয়ে বিরাজমোহিনী
বাতাসে ভাসালে - কল্যাণীয়াসু
তোমাকে বলছি , কাউকে বলিনি
তুমি সদা হৃদে বিরাজ মোহিনী
সত্যমঙ্গলও রোদের দহনে
স্বপ্নে ভিজছে বৃষ্টির গানে
সকল বেলাই কাটিয়া গেল যে
বিকেল বেলার প্রবাসজীবনে
ঘরের ভিতর কালবোশেখি
সেই সুযোগে দমকা হাওয়া কালবোশেখির
অনধিকার থিরবিজুরির গৃহপ্রবেশ ,
ওলোটপালোট ধুলোর স্নানে চুলের স্তবক
হার মানা হার দিতেই হল তোমার গলে
মরা নদীর স্রোত বয়ে যায় উঠোন জুড়ে
উদ্দামতা থামলে পড়ে সোঁদা বাতাস
হারিয়ে যাওয়া জলছবিদের কুড়িয়ে ফেরে
একটা দুটো সন্ধ্যাতারা দেওয়াল খোঁজে
ফুটবে কোথায় ? আকাশ তখন শান্তি হয়ে
বাড়িয়ে দুহাত সুদূরপ্রসার আমার ঘরে
ছোয়াঁছুঁয়ি খেলতে চাওয়া মেঘগুলোকে
( বিস্মিত হই ) , তবু কেমন ধরতে পারি
বাদলসুরে দেবব্রতের দূরাগত স্বর্ণধারায়
যেমন করে গাইছে আকাশ সঙ্গে তারি
বেসুর মেলাই । রাংচিতে আর কলমিলতার
বেড়ায় তখন পারিজাতের অমল সুবাস
শকুন্তলা
লাট্টু-ঘোরা ছেলেমানুষ দিন
হাত বাড়ালেই নাগাল পেতে পারি ....
ভাবতে ভাবতে এমনধারার কথা - হাজার বছর পেরিয়ে
গেছে কবে - কোন কালে যে জন্মেছিলাম আমি ,
বর্ষা ছিল , নাকি ফাগুন হাওয়া - প্রাগৈতিহাস হলদেটে সব দিন
তুচ্ছ এখন , ভীষণ অদরকারী ।
বিগত দিন- জমানো অস্তিভার ; অবিশ্বাসের , কিছু বা প্রতীক্ষার
এক ফুঁয়ে সব উড়িয়ে দিও তুমি
অনেক দূরের - দূর আকাশের গায়
বশিষ্ট আর অত্রি অঙ্গিরাকে স্পর্শ ক'রে উত্তরাকাশ আরো
সরলরেখায় ধ্রুব আছেন স্থির ,
সেইখানে তো অনন্ত ব্ল্যাকবোর্ড - পারলে তোমার ভালবাসার কথা ,
দু- চার কলম খোদাই ক'রে দিও , কফির কাপে বিমর্ষ সন্ধ্যায় ।
ঢেউ নেমেছে দু'গাল গড়িয়ে , হয়তো সেসব স্বপ্ন ভাঙা ঢেউ -
মিথ্যে স্বর্গ গড়তে চাওয়ার ,
গলিতসুখ অন্তমিলন পয়ার-টয়ার হবে
রোদ উঠেছে তোমার উপবনে ? এখানে আজ নিরাবয়ব দিন ,
দুপুর - বিকেল বৃষ্টি ধুয়ে গেছে , - পিতৃগৃহে শকুন্তলার শাড়ি
ভিজছে তুমুল প্রবল বরিষণে ,
অন্যমনা মগ্ন আছেন , ভুলতে চেয়ে ব্যস্ত আছেন ,
কালিদাসের নতুন লেখায় , কুমারসম্ভবে ।
Thursday, May 1, 2008
ধারাবিবরণী-১
ছেলেবেলা থেকেই ভাবসম্প্রসারণ করে আসছি 'চিরসুখীজন ভ্রমে কি কখন'...অর্থাত্ চিরসুখী মানুষেরা কখনোই ভ্রমণ করেন না...অথচ আমার ঘরকুনো স্বভাব নিয়ে সকলের মাথা ব্যথা। ক্যান্ রে বাবা? লোকের সুখ দেখতে পারিস না, না? কই , আমার মাথায় যখন 'চেতনাপ্রবাহ' না ওই ধরনের কি একটা থান ইঁট শব্দ এসে পড়েছিল, তোরা তো কেউ ফিরেও তাকাসনি। মুচ্ছো যাইনি ঠিকই, কিন্তু ঠোকাঠুকি লেগে সামনের দুটো দাঁত ভেঙে যে পেটে চলে গেল, সে বেলা? কী বলছিস বিড়বিড় করে? আমার দিকে তাকালেই মুচ্ছো যাবার সম্ভাবনা? তা সে কথা খুব ভুল বলিসনি...আমি নিজেই আয়নায় দেখে কয়েকবার ভিরমি খাবার পরে আয়নাটাকে জলের দরে বেচে দিলাম...যাকগে, ভোগ্যবস্তু যত কমে, ততই মঙ্গল...এই দ্যাখো, ভোগ্য শুনেই মনে পড়ল ভোগ...একবার বেনারসে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে অপূর্ব এক খিচুড়ি খেয়েছিলাম...তাতে সব প্রসাদ মেশানো...নারকেল নাড়ু, পায়েস সমস্ত...'তবু ভরিল না চিত্ত ঘুরিয়া ঘুরিয়া কত তীর্থ হেরিলাম'...ওইরকম প্রসাদ আর পেলাম না, তবু পড়িল না পিত্ত...তা আপনারা কিছু মনে করবেন না, আমি খাই একটু বেশি...বেশি খেতে গিয়ে একবার যা বিপত্তি হয়েছিল না! দমটম আটকে এক্কেবারে অজ্ঞান...ধরাধরি করে (সে বড় সোজা কথা নয়) তো হাসপাতালে নিয়ে গেল...ওষুধ খাবার জায়গা পেটে ছিল কিনা মনে নেই। যেটা মনে আছে, তা হল ডাকতারবাবুর বাংলাভাষার প্রতি ভালবাসা। উনি-ই প্রথম ও শেষ ডাকতার যাঁকে আমি বাংলায় ডিসচার্জ সার্টিফিকেট লিখতে দেখেছি। 'যা ফিরি অজ্ঞান তুই যা রে ফিরে ঘরে' লিখেছিলেন আমাকে। বড় ভাল ছিল গো মানুষটা...
ধারাবিবরণী-২
যে কথা হচ্ছিল --- ভাল মানুষ কি আর নেই পৃথিবীতে? আছে, অনেক আছে... সেদিন যে কুট্টিমানি, মানে আমার ছোটোমাসি ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ঘাম মুছবার জন্য রুমালটা বার করতে গেল, আর সেই সুযোগে একটা খাম টুপ করে নিচে পড়ল, সেটা ভালমানুষ না হলে হত? আমি পায়ের আলতো কাজে খামটাকে সোফার তলে (বিশ্বকাপ ফুটবলের কী মহিমা!!)...তারপর মানি চলে যেতে খাম খুলে দেখি, ক্লাসিকাল ডান্সের অনুষ্ঠান, তারই একখানা কার্ড। সেটা তো আর নষ্ট হতে দেওয়া যায়না, তাই বয়ান অনুযায়ী নির্ধারিত দিনে, নির্ধারিত হলে যেতেই হল। ভাবলাম মানির সাথে যদি দুর্ভাগ্যবশত দেখা হয়েই যায়, তাহলে বলব, কার্ডটা ফেরত দিতে এসেছি...আর দেখা যদি না হয়, তবে তো সোনায় সোহাগা। দেখা হলনা, জানেন...হি হি...আর দারুণ হল অনুষ্ঠান...
মনে মনে ভাল মানুষদের সেলাম জানালাম...থাঙ্কু মানি কুট্টি...
কিন্তু ওই যে, এই দ্যাবাপৃথিবীতে অবিমিশ্র সুখ আপনি পাবেন না...মনে করুন, খুব সুস্বাদু একটি পদ বেশ তারিয়ে তারিয়ে খাচ্ছেন, আমোদে চোখ প্রায় বুজে এসেছে, এমন সময় মুখে পড়বে একটা বিচ্ছু লঙ্কা...দেবে সব বিগড়ে...
ছোটোমাসির ছেলেটিও তেমনি...বয়স সবে পাঁচ পেরিয়ে ছয়, এরই মাঝে মুখে মুখে কথা কয়...করেছে কী, একটা দড়ি নিয়েছে, তার পেছনে আর একটা দড়ি বেঁধেছে, তার পেছনে খানিক সুতলি, কিছুটা ইলেক্ট্রিকের তার, দুটো পুরনো সাদা রিবন...এই ভাবে বাঁধতে বাঁধতে পঞ্চাশ হাত লম্বা একটা রেলগাড়ি...সে গাড়ি সদা চলমান...একতলায় বসার ঘর হয়ে ডাইনিং, বারান্দা, সিঁড়ি, দোতলাতেও এঘর সেঘর ঘুরছে...যে কোনো মুহূর্তে যে কেউ হোঁচট খেতে পারে...আমিও খেলাম...মাথাটা ঠুকে গেল দেওয়ালে...চোখে সর্ষে ফুল...
কান ধরে দুটো জিলিপির প্যাঁচ দেওয়ার তাগিদে গাড়ির মালিককে খুঁজে বার করলাম...কি ব্যাপার এটা?
ট্রেন, দেখতেই তো পাচ্ছ...
ট্রেন বার করছি তোর...এক্ষুণি পড়ছিলাম না হোঁচট খেয়ে?
তা পড়তেই পার...accident হয়না? ট্রেনে কাটা পড়েনা মানুষ?
অ...
আপনারা একটু অপেক্ষা করুন কেমন...বেলতলায় কে যেন এসেছে...বেল বাজাচ্ছে...দরজাটা খুলে দিয়ে আসি...সেই সাথে মিষ্টিগুলোরও সদ্গতি...
ধারাবিবরণী-৩
বলুন তো বেলতলায় কে বেল বাজাচ্ছিলো? আরে না মশাই, ন্যাড়া নয়...তবে প্রায় সেই রকমই এক ভদ্রলোক...বিরলকেশ...যাকে বাংলায় বলে টেকো আর ইংরিজিতে বল্ডউইন...সেই মিস্টার বল্ডউইন এসেছেন আমার উকিল ছোটোমেসো মিস্টার চেম্বারলিনের কাছে( যিনি নিজের চেম্বারে সর্বদাই লীন থাকেন)...যাকগে, আইনি কচকচিতে আমাদের কী দরকার বলুন...
এর চেয়ে মিষ্টির মিস্টিক গল্প অনেক মনোরম...মিষ্টি বললেই মনটা কেমন রাবড়ির জন্য উচাটন হয় না? তৃষিত বক্ষ (নাকি জিহ্বা?) বলে রাখি বেঁধে...সত্যি এমন সেকুলার, গণতান্ত্রিক খাবার, ...রাম আর বাবরির এইরকম শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আর কোত্থাও মিলবে ভূভারতে?
বাবরির কথায় সেই দুঃসাহসী ছেলেটিকে মনে পড়ল...ওর কথা বলেছি কি আপনাদের? ক্লাস ফাইভের হাফইয়ারলি পরীক্ষায়(আমি এই সেদিনও জানতাম যে কথাটা হ্যাপি-আর্লি, আমার এক ছাত্র কিছুদিন হল সংশোধন করে দিয়েছে)...যাই হোক যা বলছিলাম... সেই ছাত্রটি হাফইয়ারলি পরীক্ষায় বাবরের বাবার নাম লিখেছিল বাচ্চু মিঞা, ব্র্যাকেটে ডাকনাম...বিপুলা এ পৃথিবীর কোন্ প্রান্তে বসে যে কোন্ গবেষক এই তথ্য আবিষ্কার করেছেন বা করেননি, তা কে বলতে পারে!!
কি মুশকিল! ঢিল ছুঁড়ছেন কেন? ধারাবিবরণীর শেষে 'আগামী সংখ্যায় সমাপ্য' এই শব্দগুচ্ছ দেখতে পাচ্ছেন না বলে? স্থিতধী পাঠককুল, এইটিই শেষ সংখ্যা...যাচ্ছি রে বাবা যাচ্ছি... আমি কি জানিনা যে আপনাদের সময়ের দাম গলদা চিংড়ির চেয়েও বেশি?
এই দ্যাখো, ঘুরে ফিরে সেই মাছের কথায়...আসলে আমি যে মীন মাইন্ডেড, আই মিন, মীন মানে মাছ একটু বেশিই...
আরে, আবার ঢিল কেন? 'সময় যদি ফুরিয়ে থাকে হেসে বিদায় করো তাকে'... সত্যি রবীন্দ্রনাথকে এত তুরুশ্চু করেন আপনারা...
রিপোর্টাজ, শেষ পাতা
নিহিতার্থ যেইদিন বুঝে নেবে দূরত্ব ঘনালো,
তার ঠিক একদিন আগে, জানাবো তোমাকে...
আজন্ম রোদগাথা, মণিমালা মেঘ
বুকে বেঁধা কাচ-কণা কিছু -- রক্তবিন্দু তারারাজি,
বিষাদপ্রতিমা, তোর কত ভুলচুক ---জানা বা অজানা
স্মৃতির শিলাস্তূপ দুহাতে সরিয়ে কত দূরে আর?
কত দূরে যাওয়া যায়?
একা একা ভুল গলি ভুল বাঁক নিয়ে
দক্ষিণী কর্ণাটে কিংবা মালবরাজ্যে তুই চলে যাস যদি?
মঞ্জুলা, চুলে ফুল দিবি, ঘাঘরাতে বেনারসী আলো...
অমল কমল খুঁজে মন যদি উদাসীন হয়,
'ফিরে এসে কড়া নেড়ে দেখি' এমনটা সাধ হয় যদি,
বন্ধ টিকিটঘর, খাঁ খাঁ রেলপথ,
ঝরে গেছে সব পাতা, পিপুল অশথ বট,
ছায়াহীন কোথায় দাঁড়াবি?
এত কি সহজ মেয়ে? এত সুমধুর?
কঠিনও যে কী করে তা বলি?
তির্যক চাহনি শুধু, ছুঁড়ে দেওয়া দু-চারটে বাণী
সঞ্চারী থেকে এসে বিনা বাক্যব্যয়ে
সহজিয়া তানকারি নখাগ্রে ছুঁয়ে দেয় শেষের আভোগ।
ততদিন ধুলো ঘাঁটাঘাঁটি, অবেলায় স্নান-খাওয়া
আরো যা যা মন চায় করো...
ঝুলন সাজাও ফুলবনে, চাঁদমালা গেঁথে পরো
সিঁথিমূলে, বাজুতে, গলায়...
বোকা মেয়ে, সবাই কুমার নয় --
বাঁচাবে যে তোকে দূরদ্বীপে অজানিত ভেসে যাওয়া থেকে...
সবাই প্রণব নয় -- পথভোলা পাগলিকে আশ্রয় দেবে...
শেষপাতা ওড়াবার আগে দেখে নিও আরো একবার
পিছুটান কতটা মায়াবী, জরুরী কতটা--
শেষ হল আরব্য রজনী,
বাঁধাপথে দিন গোনা শুরু হোক তবে...
দ্বিপ্রহরে সেতুহীন নদী, মাঝরাতে বিধ্বংসী ঝড়
যেদিন আসবে একসাথে,
তার ঠিক একদিন আগে, জানাবো তোমাকে